Tuesday, October 2, 2018

মুসলিম জনবিন্যাস ও তা নিয়ে রাজনীতি প্রসঙ্গে


সম্প্রতি স্ন্যাপ এবং গাইডেন্স গিল্ড সংস্থাদ্বয়ের পক্ষ থেকে প্রতীচী ট্রাস্টের সহায়তায় প্রকাশিত হয়েছে একটি গুরূত্বপূর্ণ সমীক্ষা রিপোর্ট। লিভিং রিয়েলিটি অব মুসলিমস ইন ওয়েস্ট বেঙ্গলসমীক্ষাটি করা হয়েছে বহুদিন ধরে এবং এর পরিসরও ছিল বিস্তৃত। ৯৭০১৭ টি পরিবারের ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ৭৯৯১৩ টি গ্রামীন পরিবার ও ১৭১০৪ টি শহুরে পরিবার। সমীক্ষার আওতায় এসেছেন ৪,৬৩,৯০৪ জন মানুষ। সরকারী বা বেসরকারী স্তরে সাম্প্রতিক অতীতে মুসলিম জনগোষ্ঠী নিয়ে এ ধরনের বিস্তৃত কোনও সমীক্ষা হয় নি। ফলে এই সমীক্ষাটি রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীর হাল হকিকত বুঝতে অত্যন্ত কার্যকরী। জনবিন্যাস, স্বাক্ষরতা ও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, লিঙ্গগত সাম্য অসাম্য, নাগরিকত্বর প্রশ্নে বিভিন্ন সুবিধা অসুবিধা, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ও সাংস্কৃতিক মানের মত অত্যন্ত গুরূত্বপূর্ণ কয়েকটি দিকের ওপর এই সমীক্ষা আলো ফেলেছে।
আমরা ক্রমান্বয়ে এক একটি দিক নিয়ে এখানে আলোচনা করতে চাইবো। প্রথমেই আসা যাক জনবিন্যাসের দিকটিতে। কারণ এই জনবিন্যাসগত নানা দিককে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক বিষবাস্প উগরে দিতে চায় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। সমীক্ষা রিপোর্ট এখানে নির্ভর করেছে ভারতের জনগণনা রিপোর্ট (২০১১) এর ওপরে। প্রথমত উল্লেখযোগ্য এই সমীক্ষার যে প্রাথমিক প্রতিবেদনটি ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল সেখানে ২০০১ সালের জনগণনা রিপোর্টের তথ্যই ব্যবহৃত হয়েছিল। দুটি রিপোর্টের তুলনার সূত্রে ২০০১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে জনবিন্যাসের কী পার্থক্য হয়েছে তা বোঝা যায়। কোন জেলায় কত শতাংশ মানুষ মুসলিম মানুষ বাস করেন এবং ২০০১ থেকে ২০১১ সালের জনগণনার মধ্যে জনবিন্যাসের কী পার্থক্য হয়েছে তা দেখা যাবে সারণি ১ এ।
সারণি -
জেলা
মুসলিম জনসংখ্যার শতাংশমাত্রা (২০০১)
মুসলিম জনসংখ্যার শতাংশমাত্রা (২০১১)
মুর্শিদাবাদ
৬৩.৬৭
৬৬.
মালদা
৪৯.৭২
৫১.
উত্তর দিনাজপুর
৪৭.৩৬
৪৯.
বীরভূম
৩৫.০৮
৩৭.
দক্ষিণ ২৪ পরগণা
৩৩.২৪
৩৫.
নদীয়া
২৫.৪১
২৬.
হাওড়া
২৪.৪৪
২৬.
কোচবিহার
২৪.২৪
২৫.
উত্তর ২৪ পরগণা
২৪.২২
২৫.
দক্ষিণ দিনাজপুর
২৪.০২
২৪.
কোলকাতা
২০.২৭
২০.
বর্ধমান
১৯.৭৮
২০.
হুগলি
১৫.১৪
১৫.
মেদিনীপুর
১১.৩৩
পূর্ব ১৪.৬ পশ্চিম ১০.
জলপাইগুড়ি
১০.৮৫
১১.
বাঁকুড়া
.৫১
.
পুরুলিয়া
.১২
.
দার্জিলিং
.৩১
.

এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে রাজ্যজুড়েই মুসলিম জনসংখ্যার শতাংশমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যতিক্রমহীনভাবে সমস্ত জেলাতেই মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিমদের অনুপাত বেড়েছে। গোটা রাজ্যেও মুসলিম জনসংখ্যা ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৭ শতাংশ হয়েছে
মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাত বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে অনেকেই ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপূর্ণ প্রচার বেশ চড়া সুরেই চালানো হচ্ছে। একদিকে বিজেপির মত শাসক দল, অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদবা হিন্দু সমিতিনরমে গরমে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতে চাইছে।মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দেশজুড়েই বেশি। এই তথ্যকে সামনে রেখে ভারতের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে মুসলমানরা সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ করেছেবিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভি এইচ পি)তাদের অভিযোগ, অন্যান্য সম্প্রদায় যখন দেশেরজনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সেখানে মুসলমানরা তাদের সংখ্যা বৃদ্ধিরজন্য প্রচার চালাচ্ছে। বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গকে। কারণ মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধিতেবাংলা রয়েছে এগিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, মালদা ও উত্তর দিনাজপুরেহিন্দু জনসংখ্যার থেকে ছাপিয়ে গিয়েছে মুসলিম জনসংখ্যা। ২০১১ সালেরজনগণনা অনুযায়ী ধর্মভিত্তিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতে হিন্দু জনসংখ্যা যদি ০.৭ শতাংশ কমে, বাংলায়কমেছে ১.৯৪ শতাংশ। ঠিক তেমনই মুসলিম জনসংখ্যা ভারতে ০.৮ শতাংশ বেড়েছেকিন্তু বাংলায় বেড়েছে ১.৭৭ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে মোট জনসংখ্যা ৯ কোটি ১২লক্ষ। ধর্ম ভিত্তিতে হিন্দু রয়েছে ৬ কোটি ৪ লক্ষ। মোট জনসংখ্যার ৭০.৫৩শতাংশ হিন্দু রয়েছে। মুসলিম জনসংখ্যা ২ কোটি ৪ লক্ষ। ২৭.০১ শতাংশ রয়েছেনমুসলিম সম্প্রদায়। জনসংখ্যার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গে তিন জেলায় এগিয়ে রয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়।মুর্শিদাবাদে মুসলিম জনসংখ্যা ৪৭ লক্ষ, হিন্দু ২৩ লক্ষ। মালদায় ২০ লক্ষমুসলিম, হিন্দু ১৯ লক্ষ। উত্তর দিনাজপুরে ১৫ লক্ষ মুসলিম, ১৪ লক্ষ হিন্দু।প্রচার চালানো হচ্ছে ২০০১ জনগণনা অনুযায়ী শেষ দশ বছরে পশ্চিমবঙ্গেধর্মভিত্তিতে জনসংখ্যা বেড়েছে অসামঞ্জস্যভাবে, আর এই বৃদ্ধির পেছনে আছে অনুপ্রবেশের ভূমিকা
নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, যাঁরা বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসছেন, তাঁদেরমধ্যে যাঁরা দুর্গাপূজা করেন তাঁরা শরণার্থী, আর যাঁরা করেন না তাঁরাঅনুপ্রবেশকারী। অর্থাৎ, অনুপ্রবেশকারী মানে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ।পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যে ধর্মের ভিত্তিতে জনসংখ্যায় কোনও মৌলিক তারতম্যদেখা যায়নি, বিপুল পরিমাণে অনুপ্রবেশকারী রাজ্যে প্রবেশ করলে যা ঘটত।
কেউ বলতেই পারেন, রাজ্যের জেলাওয়াড়ি হিসেবের মধ্যেই, বিশেষতসীমান্তবর্তী জেলাগুলির ক্ষেত্রে, লুকিয়ে আছে অনুপ্রবেশের তত্ত্বের জন্যপ্রয়োজনীয় তথ্য। পরিসংখ্যান কী বলছে তা বুঝতেসারণী ২ এর দিকে চোখ রাখা যাক।
সারণী -
প্রথমে সীমান্তবর্তী জেলাগুলির দিকে তাকানো যাক। দেখা যাচ্ছে যে সেইজেলাগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কোনও নির্দিষ্ট একটি প্রবণতা নেই। এক দিকেযেমন উত্তর দিনাজপুরে মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার রাজ্যের মুসলমানসম্প্রদায়ের গড়ের তুলনায় ৮ শতাংশ-বিন্দু বেশি, সেখানে আবার নদিয়ায় তা প্রায়৪ শতাংশ-বিন্দু কম, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৭.৫ শতাংশ-বিন্দু কম। দ্বিতীয়ত, যেজেলায় মুসলমানদের বৃদ্ধির হার রাজ্য গড়ের তুলনায় বেশি, সেখানে হিন্দুদেরক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যেমন, উত্তর দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ইত্যাদি। আবার, যেখানে মুসলমানদের বৃদ্ধিরহার এই সম্প্রদায়ের রাজ্য গড়ের তুলনায় কম, সেই জেলাগুলিতে হিন্দুদেরক্ষেত্রেও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তৃতীয়ত, পুরুলিয়ার মতো জেলাওরয়েছে যা সীমান্তবর্তী জেলা না হওয়া সত্ত্বেও এই জেলাতে মুসলমান ও হিন্দুউভয়েরই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিজ নিজ রাজ্য গড়ের তুলনায় বেশি।
এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে কিছু সিদ্ধান্তে খুব সহজেই পৌঁছনো সম্ভব।প্রথমত, সীমান্তবর্তী জেলাগুলি অনুপ্রবেশকারীতে ভরে গেছে, এই বক্তব্যেরকোনও সারবত্তা নেই, কারণ এই জেলাগুলিতে কোনও একটি বিশেষ সম্প্রদায়েরজনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধিকে কোনও নির্দিষ্ট ছকে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না।দ্বিতীয়ত, ধার্মিক পরিচয়ের তুলনায় অন্য কয়েকটি সূচক অনেক বেশিতাৎপর্যপূর্ণ। যেমন, যে জেলাগুলিতে হিন্দু ও মুসলমান উভয়েরই বৃদ্ধির হাররাজ্যে গড়ের তুলনায় অনেকটা বেশি, সেই জেলাগুলির স্বাক্ষরতার হার অন্যজেলাগুলির তুলনায় অনেক কম। স্বাক্ষরতার নিরিখে উত্তর দিনাজপুরের স্থান সবারনীচে, তার ঠিক উপরেই রয়েছে মালদা, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ। আবার তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকা জেলা যেমন কলকাতা, হাওড়া, বর্ধমান, হুগলি বা উত্তর ২৪পরগনা উভয় সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেই জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার নিজ নিজ রাজ্যগড়ের থেকে কম। স্বাক্ষরতার নিরিখেও এই জেলাগুলির স্থান অনেক উপরে।
বিশেষত উল্লখযোগ্য যে কলকাতায় মুসলমানদের জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার শূন্য (২০০১-২০১১র মধ্যে)এবং কলকাতার জন্মহার ভারতের ৬৪০টি জেলার মধ্যেবর্তমানে সর্বনিম্ন (.২ সন্তান প্রতি দম্পতি)জনসংখ্যাবিদদের মতে, সাধারণত অর্থনৈতিক অনুন্নয়ন, সামাজিক পশ্চাদপদতা এবং জন্মহারের মধ্যেসম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক।
জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে ধর্মের সঙ্গে নয়, দেখা দরকার শিক্ষা, বিশেষত নারীদের শিক্ষা ও সামাজিক অবস্থানের নিরিখ থেকেই। বিশ্বজোড়া পরিসংখ্যানগত জরিপের এক প্রথম সারির সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সমীক্ষা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের ওপর যে গবেষণা করেছে তার দিকে এই প্রসঙ্গে নজর ফেরানো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হবে। তাদের সমীক্ষায় বলা হয় -
যেসব(মুসলিমপ্রধান) দেশে মেয়েদের শিক্ষার হার খুবই কম সেসবদেশে(মুসলিম) মহিলাদের গড়ে ৫টি সন্তান রয়েছে। আর যেসবদেশে নারী শিক্ষার হার বেশি সেসব দেশে (মুসলিম) মহিলাদের গড়ে ২দশমিক ৩টি সন্তান রয়েছে।উদাহরণ হিসেবে ইরানের কথা উল্লেখ করা যায়। এ দেশটিতে নারী শিক্ষা ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে উৎসাহিতকরা হয়। ফলে এখানে মহিলাদের বর্তমানে শিশু জন্মদানের হার ১.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এহার ইউরোপীয় অনেক দেশেরই সমপর্যায়ের। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ইরানে মহিলাদের জন্মদানহার সবচেয়ে কম। অন্যদিকে সবচেয়ে গরীব আফ্রিকান দেশ নাইজারে মহিলাদের সন্তান জন্মদানহার গড়ে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ ইরানী মেয়েরা গড়ে১৫ বছর শিক্ষাজীবনে ব্যস্ত থাকে। অন্যদিকে নাইজারে এই হার হচ্ছে মাত্র ৪ বছরঅন্যদিকে দুই ইসলামিক রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া আরপাকিস্তানে জনসংখ্যায় মুসলমানের অনুপাত কাছাকাছিযথাক্রমে ৮৭ও ৯৬ শতাংশ।কিন্তু শিক্ষার হারের তফাতের কারণেই দেশ দুটির বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারঅনেকতাই আলাদা - যথাক্রমে ১.২৮ ও ২.১১ শতাংশ।আফগানিস্তানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারযেখানে বছরে৩.০২ শতাংশ,সেখানে মালয়েশিয়ায়তা ১.৫১ শতাংশ।
ভারতেও দেখা যাবে হিন্দুদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকা অংশের মধ্যে জন্মহার বেশি। ২০১১সালের জনগণনাতে দেখাযাচ্ছে,গত দশ বছরে তফশিলি জাতি এবং জনজাতিভুক্তদেরজনসংখ্যা বেড়েছে যথাক্রমে ২০.৮ শতাংশ আর ২৩.৭ শতাংশ।যেহেতু এই দুটিগোষ্ঠীরবড় অংশই ঢুকে পড়েছে হিন্দু জনসংখ্যার হিসেবে, অতএব স্পষ্টতই, এদের বাদ দিলে বাকি বর্ণহিন্দুদেরমধ্যেজনসংখ্যাবৃদ্ধির হারসামগ্রিক হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধি হারের চেয়ে আরো কম হবেবিপরীতে সামাজিক-অর্থনৈতিক দিক থেকে যারাকার্যত সমগোত্রীয়,সেই মুসলমান (যারা মূলত নিম্নবর্গ থেকে রূপান্তরিত)ওনিম্নবর্গের হিন্দুদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রায় একই স্তরে রয়েছেএবং প্রায় একই হারে কমছে।
তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার  কমাতে হলে অনুপ্রবেশের মত বিভেদপূর্ণ রাজনৈতিক বক্তব্য তুলে ধরে বাজার গরম না করে বরং মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করা বেশি জরুরি।পরবর্তী আলোচনায় আমরা সেই দিকেই এগোতে চাইবো।

কাজকর্মের চালচিত্র -

পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের অবস্থা শীর্ষক যে খসড়া রিপোর্টটি ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তাতে আমরা দেখেছিলাম মুসলিম জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে গরিষ্ঠ অংশটি, গোটা জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক দিন মজুর হিসেবে জীবিকা অর্জন করতে বাধ্য হন। ৪৭.০৪ শতাংশ মানুষ দিনমজুর। এর পরে রয়েছে নিজের জমিতে চাষের কাজ। ১৫.৪২ শতাংশ মুসলমান নিজের জমিতে চাষাবাদ করেন। এছাড়া ক্ষেতমজুর হিসেবে অন্যের জমিতে চাষের কাজ করেন আরো ১০.১১ শতাংশ মানুষ। ছোট বড় ব্যবসার কাজে যুক্ত মানুষের সংখ্যা ২.৫৯ শতাংশ মাত্র আর বেতনভোগী হিসেবে পরিসেবা ক্ষেত্রে বা অন্যান্য ক্ষেত্রে যুক্ত আছেন ৫.৪৯ শতাংশ মানুষ।

সারণি ১ এর দিকে লক্ষ্য করা যাক
সারণি -
পেশা
শতাংশ
ক্ষেতমজুর
১০.১১
দিনমজুর (কৃষি ও অন্যান্য)
৪৭.০৪
ক্ষুদ্র স্বনিযুক্ত মজুর
.৪৭
পরিবহন শ্রমিক
.৮৮
চাষী
১৫.৪২
হস্তশিল্পী এবং অর্ধদক্ষ শ্রমিক
.০০
ব্যবসা
.৫৯
বেতনভোগী/পরিসেবা ক্ষেত্র
.৪৯
সর্বমোট
১০০

এই সারণী থেকে বোঝা যায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর বেশীরভাগ মানুষই অত্যন্ত নিম্ন আয়ের কাজের সঙ্গে যুক্ত। আমরা এর আগের এক পরিসংখ্যানে লক্ষ্য করেছিলাম উচ্চবর্ণের হিন্দুদের তুলনায় মুসলিমদের মধ্যে স্বাক্ষর শিক্ষিত এবং উচ্চশিক্ষিতদের হার অনেকটাই কম। ফলে সমীক্ষাকৃত পরিবারগুলির মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ রয়েছেন, যেগুলিকে সুরক্ষিত এবং সামাজিকভাবে কাম্য বলা যেতে পারে। ছোট ও বড় ব্যবসা মিলিয়ে মাত্র ৬.৭ শতাংশ মানুষ ব্যবসায় নিয়োজিত। অন্যদিকে নিয়মিত পরিসেবা ক্ষেত্র বা বেতনভোগী পরিবার মাত্র ৪ শতাংশ। উচ্চ আয়ের পেশা, যেমন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার উকিল ইত্যাদিতে নিযুক্ত রয়েছেন মাত্র ০.৪ শতাংশ মানুষ, যা মুসলিম জনগোষ্ঠীর এক অতি ক্ষুদ্র অংশ।
পেশার বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে জেলাওয়ারি পার্থক্য খুব ব্যাপক। কৃষি মজুরির ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলির সংখ্যা উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোয় এবং নদীয়ায় খুব বেশি। এক্ষেত্রে রাজ্যের গড় হচ্ছে ৮.৭ শতাংশ। বিভিন্ন জেলার পরিসংখ্যান এরকম। নদীয়া ১৯.%, কোচবিহার ১৯.%, জলপাইগুড়ি ১৭.%, উত্তর দিনাজপুর ১৩.%, দক্ষিণ দিনাজপুর ১২.%, বাঁকুড়া ১১.%, মালদা ১১%, মুর্শিদাবাদ ১০.%, পশ্চিম মেদিনীপুর ১০.%
যারা পেশাগতভাবে চাষের ওপর নির্ভরশীল, তাদের ক্ষেত্রেও জেলাওয়ারি পার্থক্য দেখা যায়। বর্ধমানে চাষের ওপর নির্ভরশীল ২৪.৪ শতাংশ পরিবার। এটা রাজ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বনিম্ন পুরুলিয়ায় .%বিভিন্ন জেলায় এই গড় হল উত্তর দিনাজপুর ১৭.%, মালদা ১৭.%, দক্ষিণ দিনাজপুর ১৭.%, মুর্শিদাবাদ ১৭.%, পশ্চিম মেদিনীপুর ১৬.%, বীরভূম ১৪.%, জলপাইগুড়ি ১৪ এবং বাঁকুড়া ১৩.%এক্ষেত্রে রাজ্যের গড় ১৩.%
কৃষক ও ক্ষেতমজুর পেশায় বিভিন্ন জেলার মধ্যে যে পার্থক্য দেখা যায় তার থেকে কতগুলো চোখে পড়ার মত বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে। যেমন বর্ধমান জেলায় কৃষকদের শতাংশ রাজ্যগত গড়ের চেয়ে অনেকটা বেশী কিন্তু ক্ষেতমজুরের শতাংশমাত্রা কম। এ থেকে বোঝা যায় বর্ধমান জেলায় মুসলমানদের মধ্যে ভূমিহীনতার মাত্রা অন্যান্য জেলা অপেক্ষা কম।
এছাড়াও ঠিকা শ্রমিক ও কৃষি বহির্ভূত বিভিন্ন কাজ যেমন নির্মাণ শ্রমিক, গৃহ শ্রমিক, কুলি, ঝাড়ুদার, কাগজ কুড়ানি ইত্যাদিতে যুক্ত লোকের শতাংশ রাজ্যগতভাবে ৪২.তবে এক্ষেত্রেও জেলাগত বিভিন্নতা খুব স্পষ্ট। যেমন দক্ষিণ দিনাজপুরে এটি ৫৭.%, কোলকাতায় ১৭%
ছোটখাট ধরনের কাজে স্বনিযুক্ত শ্রমিকদের মধ্যে আছেন দোকানদার, হকার, ভেন্ডার, সিকিউরিটি গার্ড, বিড়ি শ্রমিক ও অন্যান্যরা। এই ধরণের কাজে নিযুক্ত লোকেদের সর্বোচ্চ সংখ্যা পুরুলিয়ায় (২২.%) ও সর্বনিম্ন দক্ষিণ দিনাজপুরে (.%)রাজ্যগতভাবে এক্ষেত্রে গড় হল ৮.৩৪ %
রাজ্যের মুসলমান পরিবারগুলোর মধ্যে ৫.১২ % নানা ধরণের পরিবহন শ্রমের সঙ্গে যুক্ত। এঁদের মধ্যে পড়েন ড্রাইভার, কনডাক্টার, খালাসি, রিক্সাচালক, ভ্যানচালক প্রভৃতি। এই কাজে দার্জিলিং এ লিপ্ত ১২.%, কোচবিহারে ৯.%, কোলকাতা ৮.% মুসলিম মানুষ।
ব্যবসা বাণিজ্যে নিযুক্ত পরিবারের সংখ্যা কোলকাতায় সবচেয়ে বেশি (১৭.%), তারপর উত্তর ২৪ পরগণা (.%), দক্ষিণ ২৪ পরগণাতে (.%)নদিয়ায় এটা সবচেয়ে কম .%সমীক্ষাকৃত পরিবারগুলির মধ্যে বেতনভোগী পেশা, সরকারী কাজকর্মে মাত্র ০.৩৬ শতাংশ মানুষ যুক্ত, এদের বেশীরভাগটাও কোলকাতায়।
মুসলিম জীবনযাত্রা সম্পর্কিত পরিসংখ্যানগুলি থেকে এটাই বেরিয়ে আসে যে জীবনধারণের জন্য এ রাজ্যের মুসলিমদের কঠোর দৈহিক শ্রমের ওপরেই মূলত নির্ভর করতে হয়। বৌদ্ধিক শ্রমে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা খুবই কম। তবে বিভিন্ন জেলায় পেশাগত বৈচিত্র্য আছে। মুসলিমদের জীবন যাপনের মানোন্নয়নের জন্য এই পার্থক্যের দিকগুলিকে মাথায় রেখে পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজনিয়তা আছে।
এই রাজ্যের মুসলমানদের সঙ্গে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে মুসলিমদের দুটি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য আছে। সর্বভারতীয় চিত্রের বিপরীতে এই রাজ্যে গ্রামে বাস করা মুসলমানদের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। দ্বিতীয়ত সর্বভারতীয় মানের তুলনায় এ রাজ্যে কর্মনিযুক্তির প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে মুসলমানদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এই দুটি ক্ষেত্র মিলিয়ে সামাজিক কর্মনীতি এবং রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ক্ষমতা কাঠামোয় তাদের ভূমিকাও তুলনামূলকভাবে ন্যূন হয়। এই অবস্থার কোনও মৌলিক পরিবর্তনের দিকে নজর দেওয়ার পরিবর্তে বর্তমান শাসকদের লক্ষ্য মুসলিম সমাজের ধর্মীয় শিরোমণিদের কিছু সুযোগ সুবিধে পাইয়ে দিয়ে সংখ্যালঘু ভোট করায়ত্ত করা এবং সাধারণ সমাজ কাঠামোয় যথাস্থিতি বজায় রাখা। মুসলিম সমাজের ব্যাপক মানুষ অবশ্যই শাসকের এই কৌশলের আসল ছবিকে উপলব্ধি করবেন এবং সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে উপযুক্ত রাজনৈতিক সামাজিক কর্মকাণ্ড গ্রহণ করবেন।





মুসলিম ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা প্রসঙ্গে কিছু কথাবার্তা



পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের প্রায় সাতাশ শতাংশ মুসলিম। একটি পিছিয়ে পড়া দেশের অঙ্গরাজ্য হিসেবে গোটা রাজ্যের নাগরিকদের মধ্যেই শিক্ষা এবং সাক্ষরতার হার বেশ কম, কিন্তু তার মধ্যেও আবার বেশি পিছিয়ে আছেন মুসলিম এবং তপসিলী/দলিতরা। অন্য একটি হিসাব নিলে দেখা যাবে শহরের থেকে গ্রামের মানুষেরাই শিক্ষার দিক থেকে বেশি পিছিয়ে আছেন। একথাও এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করার মতো যে মুসলিম জনসংখ্যার গরিষ্ঠ অংশটাই গ্রামে বসবাস করেন। সারণী ১ থেকে আমরা ২০০১ সাল নাগাদ রাজ্যের শিক্ষাচিত্রটি ঠিক কী রকম ছিল, তার একটা ছবি পাবো।

সারণি (সাক্ষরতার হিসাব)
বাসস্থান
হিন্দু
তপসিলী জাতি
মুসলিম
অন্যান্য
সামগ্রিক
গ্রাম
৬৭
৫৪
৫৬
৭৮
৬৩
শহর
৮৪
৬৮
৬৬
৮৭
৮১
সমগ্র রাজ্য
৭২.
৫৬.
৫৭.
৮১.
৬৮.

(এই তথ্য ২০০১ সালের জনগণনার এবং সাত বছরের উর্ধ্বের নাগরিকদের সাক্ষরতার হিসাব)
সারণি থেকে এটা স্পষ্টই বোঝা যায় তপসিলী/দলিত এবং মুসলিমদের অবস্থা বেশ কাছাকাছি এবং তারা অন্যান্যদের থেকে শিক্ষার নিরিখে অনেকটাই পিছিয়ে আছেন। আমাদের রাজ্যের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় মুসলিম এবং দলিতদের পিছিয়ে থাকার একটা প্রধান কারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের পিছিয়ে থাকা।
 সারণি ১ এ অবশ্য শুধু সাক্ষরতা সংক্রান্ত তথ্যটিই রয়েছে এবং একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে নেহাৎ সাক্ষরতা সামাজিক ক্ষমতায়নের নিরিখে খুব বেশি ভূমিকা রাখে না। ন্যূনতম শিক্ষিত হিসেবে যদি আমরা মাধ্যমিক শিক্ষিতদের কথা ভাবি এবং উচ্চ শিক্ষিত বলতে অন্তত স্নাতক উত্তীর্ণদের কথা ভাবি, তাহলে আরো করুণ চিত্রের মুখোমুখি হতে হবে আমাদের।
সারণি (শিক্ষিতের হিসাব)
ধর্ম
গ্রাম/মাধ্যমিক
শহর/মাধ্যমিক
গ্রাম/স্নাতক
শহর/স্নাতক
ইসলাম
.
১৩.
.
.
হিন্দু
.
৩৩.
.
১৩.
সামগ্রিক
.
৩১.
.
১২.

(এই তথ্য ন্যাশানাল স্যাম্পেল সার্ভে রিপোর্ট সংখ্যা ৪৭৩ এর; ২০০০ সালের)
সারণি ২ থেকে দেখা যাচ্ছে সামগ্রিক গড় বা হিন্দু সহ নাগরিকদের থেকে মুসলিমদের মধ্যে শিক্ষিত বা উচ্চশিক্ষিতদের সংখ্যা অনেকটাই কম।
সারণি ৩ এ আমরা আরেকটু সমকালীন তথ্যের দিকে চোখ রাখব। স্ন্যাপ এবং গাইডেন্স গিল্ড এর ২০১৩-১৪ সালে করা সমীক্ষা এবং ২০১১ সালের সেন্সাস রিপোর্টের মধ্যে এখানে আমরা একটা তুলনা করতে পারবো। ২০১১ সাল যেহেতু তৃণমূল সরকারের ক্ষমতায় আসার বছর, তাই এই তুলনামূলক তথ্য থেকে আমরা তিন চার বছরে তৃণমূল সরকারের আমলে শিক্ষায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিবর্তনের চেহারাটা দেখতে পাব। অন্যদিকে ২০০১ সালের সেন্সাস এর তথ্য ও ২০১১ সালের সেন্সাস এর তথ্যের তুলনামূলক পর্যালোচনা আমাদের দেখিয়ে দেবে শেষ দশ বছরে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে সংখ্যালঘু শিক্ষার হাল হকিকতে কতটা বদল হয়েছিল।
সারণি (সাক্ষরতার হিসাব)

২০০১ মুসলিম
২০১১ মুসলিম
২০১৪ মুসলিম
গ্রাম
৫৬
৬৭.
৬৮.
শহর
৬৬
৭৩.
৭৫.
সামগ্রিক
৫৭.
৬৮.
৬৯.

এই তথ্য দেখিয়ে দিচ্ছে ২০১১ থেকে ২০১৩/১৪ র মধ্যে অর্থাৎ তৃণমূল সরকারের আমলে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাক্ষরতার তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও বিকাশ ঘটে নি। তা এক থেকে দুই শতাংশের মধ্যেই আবদ্ধ থেকেছে। তৃণমূল সরকারের গ্রামমুখী উন্নয়নের প্রচারের ঢক্কানিনাদ স্বত্ত্বেও মুসলিমদের মধ্যে গ্রামীণ সাক্ষরতা বিকাশের হার এক শতাংশেরও কম। শহরে সেটা দুই শতাংশ। সামগ্রিকভাবে গ্রাম শহর মিলিয়ে তৃণমূল সরকারের আমলে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাক্ষরতার বৃদ্ধি এক শতাংশেরও কম। বরং ২০০১ থেকে ২০১১ র মধ্যে লক্ষ্যণীয় বিকাশ চোখে পড়ে গ্রামীণ এবং শহর উভয় ক্ষেত্রেই। গ্রামের ক্ষেত্রে এই বিকাশ ছিল প্রায় সাড়ে এগারো শতাংশ। শহরে সাড়ে সাত শতাংশ। সামগ্রিকভাবে প্রায় এগারো শতাংশ।
সামাজিক ক্ষমতায়নের অন্যতম হাতিয়ার সাক্ষরতা ও শিক্ষা। সে ক্ষেত্রে তৃণমূল সরকারের আমলে মুসলিমদের চোখে পড়ার মতো উন্নতিটুকু হয় নি শুধু তাই নয়, বামফ্রন্ট আমলের উন্নতির হারের থেকে এই আমলের উন্নতির হার সংখ্যালঘু শিক্ষা সাক্ষরতার ক্ষেত্রে অনেক অনেক কম। ইমাম ভাতা মোয়াজ্জ্বেন ভাতা দিয়ে ধর্মীয় শিরোমণিদের খুশি করা আর সংখ্যালঘু সমাজের সামগ্রিক বিকাশের দিকে নজর দেওয়ার মধ্যে তৃণমূল সরকার প্রথম পথটি বেছে নিয়েই সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক করায়ত্ত করতে চাইছেন। ইমাম মোয়াজ্জ্বেন ভাতা বা ক্লাবে দান খয়রাতি চালালেও মুসলিম সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সাহায্য দেবার কোনও সদিচ্ছা তাদের নেই। বেসরকারী মাদ্রাসা শিক্ষকেরা স্বীকৃতির দাবিতে দিনের পর দিন আন্দোলন, অনশন করেছেন, কিন্তু পুলিশের লাঠি আর ফাঁকা অসাড় প্রতিশ্রুতি ছাড়া তাদের আর কিছু মেলে নি।
এই প্রেক্ষাপটে বিগত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ অনেকগুলি মুসলিম সংগঠনের প্রতিনিধিরা একজোট হয়ে একটি সম্মেলন করেন যা পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সমাজ রাজনীতিতে যথেষ্ট ইঙ্গিৎবহ। একদিকে সরকারের পক্ষ থেকে যখন নিজেদেরকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘুদের দরাজ দাতা হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস রয়েছে, তখন দাবি দাওয়া বঞ্চনার অভিযোগের ভিত্তিতে আয়োজিত এই সম্মেলনের বিশেষ তাৎপর্য বর্তমান। আগত নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন তাঁরা যৌথভাবে সরকারের কাছে কিছু দাবি দাওয়া তুলে ধরতে চান। তাদের দাবি দাওয়ার মধ্যে আছে - মুসলমানদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য একটি সংখ্যালঘু উন্নয়ন পর্ষদ তৈরী করা,শিক্ষা আর চাকরীর ক্ষেত্রে মুসলমানদের জন্য অন্যান্যপশ্চাদপদ জাতিগোষ্ঠীরঅধীনে সংরক্ষন,ওয়াকফ সম্পত্তির নয়ছয় বন্ধ,বেসরকারীমাদ্রাসাগুলিকে সহায়তা ইত্যাদি। তাঁদের বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার মুসলিমদের উন্নয়নের জন্য প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিগুলি সেভাবে পূরণ করে নি।




কৃতজ্ঞতা
) পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের অবস্থা : একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন ২০১৪
) লিভিং রিয়েলিটি অব মুসলিমস ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল : এ রিপোর্ট (২০১৬)
) পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষায় অগ্রগতি : পরিসংখ্যান আলোচনা সচ্চিদানন্দ দত্ত রায়
)অনুপ্রবেশের তত্ত্ব আসলে ধাপ্পাবাজি - শুভনীল চৌধুরী ও শাশ্বত ঘোষ
) পিউ রিসার্চ সেন্টার রিপোর্ট (http://www.pewresearch.org)

No comments: